দেশজুড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শিশুরা। বর্তমানে শিশুদের নাক বন্ধ হওয়া, সর্দি এবং হাঁচি দেওয়া খুবই সাধারণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। শীতকালে এই সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিকাশমান থাকার কারণে তারা সবর্দাই জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে।

ঠাণ্ডা রোগের উপসর্গ

◾নাক বন্ধ সব শিশুদের ক্ষেত্রে গুরুতর হয় না। দুই মাসের চেয়ে কম বয়সী বেশির ভাগ শিশু শুধু নাক দিয়ে শ্বাস নেয়। খুব ভালোভাবে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে পারে না। তখন সে অস্থির আচরণ করে; খাওয়াতে এবং ঘুমানোতে সমস্যা হয়।
হাঁচি, সর্দি, কাশি, ফুসকরি, চুলকানি, চোখ দিয়ে পানি পড়া, মাথা ব্যথা এবং কানের ব্যথা এবং শুনতে অসুবিধা হয় হতে পারে।

◾শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থাকলে জ্বরও হতে পারে।
নাক বন্ধের কারণ

◾ফোলা অ্যাডিনয়েড : মুখের উপরিভাগে অবস্থিত লিম্ফ টিস্যুগুলোর সমন্বয় হলো অ্যাডিনয়েড, যেখানে নাকের শ্বাস নেওয়ার নালিগুলো গলার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। আগত বায়ু শোধনের ছাঁকনি হিসেবে এবং আক্রমণাত্মক জীবাণুগুলোকে শনাক্ত করার সময় প্রাথমিক প্রতিরোধ সৃষ্টি করাই এর কাজ।
নাকের বাঁকা হাড় : দুই নাকের মাঝের কারটিলেজের দেয়াল বা সেপটাম হাড় নাককে অর্ধেক বিভক্ত করে রাখে। ৮০ ভাগ লোকের মধ্যেই কিছুটা বাঁকা সেপটাম থাকে। এই বিচ্যুত বা বাঁকা সেপটাম হাড়কে Deviated Nasal Septum বলে।
কোয়ানাল অ্যাট্রেসিয়া : জন্মের সময় থেকেই নাকের নালি পুরো গঠিত হয়। তবে কখনো কখনো কিছু শিশুর শ্বাসনালি সঠিকভাবে তৈরি হয় না। এটি নরম হাড় বা হাড়ের টিস্যু দ্বারা সংকীর্ণ বা অবরুদ্ধ থাকতে পারে, যা কোয়ানাল অ্যাট্রেসিয়া নামে পরিচিত। এতে আক্রান্ত বেশির ভাগ শিশুর নাকের একটি দিক বন্ধ থাকে। এর অন্য লক্ষণগুলো হলো নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের পাঁজর দেবে যাওয়া। তখন একই সঙ্গে দুধ পান এবং শ্বাস নেওয়ায় অসুবিধা হয়। এর সঙ্গে হার্টের ত্রুটিসহ অন্যান্য জন্মগত সমস্যার আশঙ্কা থাকে।

◾সর্দি, ফ্লু, অ্যালার্জি বা সাইনাসের সংক্রমণ।
◾অ্যালার্জি রাইনাইটিস বা নাকের অ্যালার্জি।
◾নাকের আস্তরণের টিস্যুগুলো ফুলে যাওয়া।
◾নাকের অতিরিক্ত শ্লেষ্মা গলার পেছনে চলে গেলে বা প্রবাহিত হলে কাশি বা গলা ব্যথা হতে পারে।
◾পরাগ রেণু, ধুলা, ধোঁয়া বা পোষা পশু-পাখির পশমজাতীয় দ্রব্যের সংস্পর্শ ইত্যাদি।

করণীয়

◾রাবার বাল্ব সিরিঞ্জ : প্রতিবার খাবার আগে ছোট শিশুর নাক পরিষ্কার করুন। এ জন্য একটি রাবার বাল্ব সিরিঞ্জ (Nasal Aspirator) ব্যবহার করা যেতে পারে। নাকের মধ্যে আলতোভাবে স্যালাইন (নর্সোল, সোলো) দুইবার দিন। প্রথমে কয়েক ফোঁটা স্যালাইন নাকে দিলে শ্লেষ্মা পাতলা হবে। এর ১০ মিনিট পর আলগা শ্লেষ্মা বের করতে বাল্ব সিরিঞ্জ ব্যবহার করুন।

◾জ্বলীয়বাষ্প ব্যবহার : বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা তৈরি করতে রুমে বাষ্পীকরণকারী বা হিউমিডিফায়ার (Humidifier) ব্যবহার করলে নাকের শ্লেষ্মা পাতলা হয়। এরপর বাল্ব সিরিঞ্জ দ্বারা হাঁচি দিলে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসে। এ জন্য প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন ভ্যাপারাইজার বা জ্বলীয়বাষ্প। তবে ঘরের আর্দ্রতা খুব বেশি বাড়ানো যাবে না। বাথরুমের গরম পানির কল বা শাওয়ার খুলেও বাষ্প তৈরি করা যেতে পারে।

◾বিছানার মাথার দিকটা উঁচু রাখা : শিশুর ঘুমানোর সময় বিছানার মাথার দিক কিছুটা উঁচু করে রাখা ভালো। প্রয়োজনে মাথার নিচে দুটি বালিশ রাখুন। বেডের পায়ার নিচে ইট বা বোর্ড দিয়েও উঁচু করা যেতে পারে। হৃৎপিণ্ডের সমান্তরাল মাথা থাকলে নাক বেশি বন্ধ হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি হয়।

◾বেশি তরল খাবার দিন : একটু বড় শিশুদের একটু বেশি পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার (স্যুপ, পানীয় ইত্যাদি) খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে পারেন। তবে সেই তরল খাবারগুলো অবশ্যই চিনিমুক্ত থাকা ভালো।

◾স্যালাইন স্প্রে : ওষুধের দোকানে স্যালাইনের ড্রপ বা নেজাল স্প্রে পাওয়া যায়। নাকে প্রতিদিন তিন থেকে চারবার স্যালাইন ফোঁটা দিন বা স্প্রে করুন। এক কাপ (২৪০ মিলিলিটার) গরম পানি, আধা কাপ চা চামচ (৩ গ্রাম) লবণ এবং একচিমটি বেকিং সোডা মিশিয়ে তৈরি করতে পারেন নাকের এই স্যালাইন ড্রপ। অথবা শুধু আধা কাপ হালকা গরম পানিতে সিকি চামচ লবণ মিশিয়েও বানাতে পারেন।

যখন শিশুদের চিকিৎসকের কাছে নেবেন

◾শিশুর টনসিল বা গলা ব্যথা থাকলে বা সাদা বা হলদেটে সাদা দাগ থাকলে।

◾নাকের এক দিক থেকে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বা সাদা বা হলুদ-সবুজ রঙের শ্লেষ্মাসহ ১০ দিনের বেশি কাশি স্থায়ী হলে।

◾এসব লক্ষণের সঙ্গে জ্বর থাকলে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুর ২৪ ঘণ্টার বেশি জ্বর স্থায়ী হলে।

◾ঘন ঘন ও দ্রুত শ্বাস নিলে। নবজাতকের মধ্যে দুই মাস বয়স পর্যন্ত প্রতি মিনিটে ৬০ বারের বেশি শ্বাস নিলে। দুই মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটে ৫০ বারের বেশি শ্বাস নিলে এবং দুই বছরের পর থেকে মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস নিলে।

◾শিশুটি কম খেলে বা কম পান করলে। অথবা খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হলে।

◾স্বাভাবিকের চেয়ে কম প্রস্রাব করলে।

◾শিশু যদি প্রায়ই তার কানে হাত দেয় বা স্পর্শ করে বা মনে হয় ব্যথা করছে—এমন হলে।

◾স্বাভাবিক আচরণ না করলে, খুব ক্লান্ত দেখালে।